পরেশ দেবনাথ, বিশেষ প্রতিনিধি , যশোর, দৈনিক সারা দুনিয়া।
কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া ডিগ্রী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সদালাপী অনুকূল চন্দ্র মণ্ডল-এর অবসর জনিত বিদায় গ্রহণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার পাঁজিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে সকাল ১১ টায় শিক্ষক, অভিভাবক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ও এলাকার শিক্ষানুরাগীদের উপস্থিতিতে ওই বিদায়ী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর-২৪) ছিল তাঁর শেষ কর্মদিবস।
পাঁজিয়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ রুহুল আমিন-এর সভাপতিত্বে, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পাঁজিয়া ডিগ্রি কলেজের সভাপতি, পাঁজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোকবুল হোসেন (মুকুল)।
অনুষ্ঠানে বক্তারা এই নিষ্ঠাবান বিদায়ী শিক্ষকের কর্মজীবনের উপর আলোকপাত করেন এবং তার শেষ জীবনের সুস্থতা কামনা করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে সহকর্মীদের দেওয়া উপহার হিসেবে বিদায়ী শিক্ষককে একটি স্বর্ণের আংটি পরিয়ে দেন প্রধান অতিথি ও অধ্যক্ষ। এসময় একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে। সকলে ক্রন্দনে ফেটে পড়েন।
তিনি ইং-১৯৯৪ সালের ৮ মার্চ পাঁজিয়া মহাবিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। কলেজটি অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারী থেকে এমপিও হয়। ২০০৫ সাল তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান এবং ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর কর্মজীবন শেষ হয়।
সহকারী অধ্যাপক অনুকূল চন্দ্র মন্ডল-এর পিতা সুধীর কৃষ্ণ মণ্ডল ও মাতা সৌরঙ্গরানী (উভয়ই প্রয়াত)। বাংলাদেশের সবথেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল সুন্দরবন ঘেঁষা খুলনা জেলার পাইক গাছা উপজেলার এক অখ্যাত ফানাখালি নামক গ্রামে ১৯৬৫ সালের ১ জানুয়ারী অত্যন্ত দরীদ্র এবং প্রান্তিক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমান তিনি এক স্ত্রী, এক কন্যাসহ কেশবপুরে বসবাস করেন। গরীব অসহায় পরিবার থেকে অতি কষ্ঠে ১৯৮০ সালে এস.এস সি দ্বিতীয় বিভাগ, ১৯৮২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দ্বিতীয় বিভাগ, ১৯৮৯ সালে অনার্স দ্বিতীয় বিভাগ ও ১৯৯১ সালে এম,এ দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন।
১৯৯১ সালে ১৯৯১ সালে গণ সাহায্য সংস্থা নামক এক বেসরকারী সংস্থায় চাকরীতের প্রথমে নীলফামারী উপজেলায় এবং পরে বাগের হাট জেলার চিতলমারীতে দায়িত্ব পালন করেন। এক বছর পর ঐ চাকরী ছেড়ে ব্র্যাক নামক সংস্থায় প্রথম মাগুরা জেলার শ্রীপুর, তারপর ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ঘুরে যশোর জেলার কেশবপুর তার পাপিয়া ব্রাঞ্চে কাজ করতে থাকেন। এই সময় পাঁজিয়ায় কয়েকজন সমাজ সেবক, রাজনীতিবিদ এবং গুণী ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় ঐতিহ্যবাহী সাত নম্বর পাঁজিয়া ইউনিয়নের পাঁজিয়া মহাবিদ্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি পাঁজিয়া কেন্দ্রিক কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মধ্যে পাঁজিয়া সমাজকল্যান সংস্থা যেটা ২০১১ সালে পরিবেশের উপর জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। ১৯৯৯ সাল থেকে অদ্যাবধি এ সংস্থার সভাপতির দাযিত্ব পালন করে আসছেন তিনি।
এছাড়া গণউন্নয়ন নামক একটি সংস্থার সভাপতি ছিলেন কয়েক বছর। তন্মধ্যে সি, আর, ডি, এম, নাম একটি সংস্থার (বিলুপ্ত) আমি পরিচালকে দায়িত্বে ছিলাম। ২০১০ সালে বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থা পাঁজিয়া ইউনিয়নের সভাপতি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর কেশবপুর শাখার সহ-সভাপতি এবং কেশবপুর নাগরিক সমাজের একজন সদস্য হিসেবে আছেন। বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত এই পাঁজিয়া ডিগ্রী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সর্বজন শ্রদ্ধেয় অনুকূল চন্দ্র মণ্ডল-এর অবসর জনিত বিদায়কালে সকলের কাছ দোয়া ও আশির্বাদ প্রার্থনা করেছেন। অধ্যক্ষের বাণীঃ কেশবপুরের ঐতিহ্যবাহী পাঁজিয়া অঞ্চলে জ্ঞানার্জনের অন্যতম প্রতিষ্ঠান পাঁজিয়া ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অত্র এলাকার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর কলকাকলিতে মুখর অত্র কলেজে সময়ের সাথে সাথে উত্তরোত্তর উন্নতি সাধন করছে। উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ নিয়ে শুরু করা কলেজে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও স্নাতক (পাস) বিভাগ চালু রয়েছে। কলেজের সময়কাল শেষ হলে সকলকে কলেজে পাঠদান থেকে বিদায় নিতে হবে। অধ্যাপক সর্বজন শ্রদ্ধেয় অনুকূল চন্দ্র মণ্ডল-এর অবসর জনিত বিদায়কালে সুখী, সমৃদ্ধ জীবন কামনা করি।