মঙ্গলকোটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় পিয়ন প্রফুল্ল দেবনাথ আর নেই।

স্টাফ রিপোর্টার
0

 


পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর , দৈনিক সারা দুনিয়া।


কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট বাজার পোস্ট অফিসের অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রফুল্ল দেবনাথ (৯৫) সকলের মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন পরপারে। 

দৈনিক গ্রামের কাগজের দৈনন্দিন পাঠক প্রফুল্ল দাদু সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে চার দিন পাঞ্জা লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২৬ আগস্ট-২৪) বিকেল চারটায় তার মৃত্যু হয়। রাতে তার মৃতদেহ নিজ গ্রাম বিদ্যানন্দকটি মহাশ্মশানে দাহ করা হয়। সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রফুল্ল দেবনাথের পাঁচ ছেলে, তিন মেয়ে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল ১১ টায় মঙ্গলকোট বাসস্ট্যান্ড থেকে রাস্তা পার হওয়ার সময় কেশবপুর থেকে চুকনগরগামী একটি ঘাতক ট্রাক তাকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে পিচের রাস্তার উপর লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে কেশবপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যায় তার ছেলেরা খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি হাসপতালের আইসিইউতে সোমবার বিকেলে মারা যান। 

সর্ব শ্রদ্ধেয় পিয়ন প্রফুল্ল দাদু বার্ধক্যের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত তিনি উপজেলার মঙ্গলকোট পোস্ট অফিস থেকে চাকরি জীবন শেষ করেছেন। তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিনা চশমায় খবরের কাগজ পড়তেন। তিনি দৈনিক গ্রামের কাগজ, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও সাপ্তাহিক পল্লীকথার পাঠক ছিলেন। দাদুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সর্ব শ্রদ্ধেয় পিয়ন প্রফুল্ল দেবনাথ মঙ্গলকোট পোস্ট অফিসের মঙ্গলকোট ইউনিয়ন, বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়ন, কেশবপুর ইউনিয়ন এবং ডুমুরিয়া উপজেলার কিয়দাংশের মঙ্গলকোট, বসুন্তিয়া, কেদারপুর, রামকৃষ্ণপুর, বাদুড়িয়া, আলতাপোল, বিদ্যানন্দকাটি, লালপুর, পর্চক্রা, বাউশলা, পাঁচারই, পাথরা গ্রামসহ আশেপাশের অনেক গ্রামের লোকজন মঙ্গলকোট বাজারে আসা-যাওয়া থাকায় তারা এই পোস্ট অফিসের ঠিকানায় চিঠিপত্র আদান-প্রদান করতেন ফলে এতদোঞ্চলে তিনি অতি পরিচিত এবং শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।

সদালাপী প্রফুল্ল দেবনাথের নিজ বাড়ি বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের বিদ্যানন্দকাটি গ্রামে। পোস্ট অফিসে চিঠিপত্র, মানিঅর্ডার, পার্সেল আসলে দেরি না করে অতি দ্রুত তিনি দিনরাত হেঁটে হেঁটে বাড়িতে, প্রতিষ্ঠানে যেয়ে দিয়ে আসতেন। যদি কোন চাকরির চিঠি বা অতি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি আসে সেটা একদিন দেরীতে দিলে ওই ব্যক্তির বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে মনে করে সেগুলো দ্রুত পৌঁছানোর চেষ্টা করতেন। চাকরীর চিঠি পেলে অনেকে তাকে খুশি হয়ে উপহারও দিতেন। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি বাড়ি বসে থাকতেন না। বাজারে, বিভিন্ন বাড়িতে, প্রতিষ্ঠানে বেড়াতে যেতেন এবং আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই তাকে ভক্তি করতেন।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, মোঃ রেজাউল করিম, পরিচালক (ট্রাফিক) অঃ দাঃ বেনাপোল স্থলবন্দর, যশোর, সাবেক ব্র্যাক কর্মকর্তা তপন কুমার ব্রহ্ম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল মেডিসিন, হৃদরোগ ও বাতজ্বর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায়, সিনিয়র সাংবাদিক ইব্রাহিম রেজা, সাংবাদিক পরেশ দেবনাথ, সাংবাদিক জিএম মিটু, ডাঃ জাকির হোসেন, মঙ্গলকোট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুর রহমান, পাথরা পল্লী উন্নয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তপন কুমার ব্রহ্ম, চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন, সাবেক ব্যাংকার অমরেন্দ্র নাথ সিংহ, মঙ্গলকোট বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ডাঃ জুলফিকার আলী, কেশবপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি নন্দদুলাল বসু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলতপোল গ্রামের গ্রৌতম রায়, সন্তোষ দেবনাথ, বিদ্যানন্দকাটী-মঙ্গলকোট সার্বজনীন দূর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি নিমাই চন্দ্র ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার ঘোষ ভাড়ু, মঙ্গলকোট সেবা সমাজ কল্যাণ সংস্থার পরিচালক এস,এম কোরবান আলী, ডাঃ জগদীশ কুমার সিংহ, রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আফসার দফাদার, কেদারপুর গ্রামের ডাঃ আব্দুস সাত্তার, ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম, গোরীঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোকলেচুর রহমান, কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হুমায়ুন কবির, বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী আশুতোষ হালদার, বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী মহিতোষ ঘোষ, জাতীয় পার্টির নেতা জালাল উদ্দীন সরদার, বিশিষ্ঠ ঔষধ ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম, জহির হাচানসহ অনেকে। 

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)