পরেশ দেবনাথ, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, দৈনিক সারা দুনিয়া।
ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বধ্যভূমি পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২০মে চুকনগরে যে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছিল, তা বিশ্বের ইতিহাসে একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। দেশকে স্বাধীন করার জন্য পৃথিবীর ইতিহাসে একই দিনে এত অল্প সময়ে এত বড় গণহত্যা আর কোথাও সংগঠিত হয়নি। এই হত্যাকান্ড হিরোশিমা ও নাগাসাকির হত্যাকান্ডকে হার মানিয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে। আমরা তার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।
শনিবার (৬ জুলাই-২৪) সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বধ্যভূমি পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন। খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন-এর সভাপতিত্বে এবং চুকনগর গণহত্যা ৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি ও চুকনগর ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ বি এম শফিকুল ইসলাম-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা ৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন এমপি। বক্তব্য রাখেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সচিব নবিরুল ইসলাম, খুলনা জেলা পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সরদার মাহাবুবার রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল আমীন, আমরা ৭১ এর সভাপতি, কবি ও সাহিত্যিক মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব জামান, আমরা ৭১সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলাল ফয়েজি, উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল ইসলাম মানিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা চন্দ্র কান্ত তরফদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মহিউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী নাজিম উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র নাথ বৈরাগী, বীর মুক্তিযোদ্ধা দীনবন্ধু বৈরাগী, বীর মুক্তিযোদ্ধা দিলীপ কুমার রায, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফিরোজ রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক মোড়ল, ওসি সুকান্ত কুমার সাহা, আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হেলাল উদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সম মুস্তাফিজুর রহমান দুলু, আওয়ামী লীগ নেতা প্রহ্লাদ ব্রহ্ম, সম সিরাজুল ইসলাম, জিএম ফারুক হোসেন, সরদার শরিফুল ইসলাম, চুকনগর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম ব্রাউন, সরদার ওহিদুল ইসলাম, প্রভাষক গোবিন্দ ঘোষ, অরুণ নন্দী, জাকির হোসেন মিল্টন, সম ইকবল হোসেন সালাম, বিশ্বজিৎ মজুমদার, কেএম মফিজুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে বর্বর পাকবাহিনী প্রবেশ করে প্রায় দশ সহস্রাধিক নিরন্ন মানুষের গুলি করে হত্যা করে। উল্লেখ্য, নিষ্পাপ শিশু, নর-নারী এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। বাঙ্গালী জাতির জন্য সময়টা তখন ছিল বিপর্যয়। দেশে চলছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরোচিত ঘটনা। খান সেনারা ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর বাহিনীর সীমাহীন অমানবিক অত্যাচার। জ্বালাও, পোড়াও নীতি আর হত্যা, গুম ও পাশবিক তাণ্ডব খেলা। অন্যদিকে স্বাধীনতাকামী মানুষ মা-মাটির সার্বভৌমত্বের জন্য সংগ্রামী হয়ে লড়েছে পাকবাহিনী হানাদারের বিরুদ্ধে। এ সময় বিপন্ন আদম আশ্রয় নিচ্ছে ভারতে। এমনি প্রতিকুলের মধ্যে বৃহত্তর খুলনা জেলার বাগেরহাট, রামপাল, শরণখোলা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, মংলা, ডুমুরিয়া, চালনা প্রভৃতি উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ মানুষ ভারতের উদ্দেশ্যে নৌকা পথে, স্থল পথে চুকনগর বাজারে আসে। ১৯৭১ সালের ২০শে মে বেলা প্রায় ১২ টা হবে লাল টকটকে সূর্য আরও দিপ্তীময় হয়ে উঠেছে। মানুষ দুপুরে খাওয়া ও রান্না বান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা দুপুরে খাওয়া সেরে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। এমন মূহুর্তে সাতক্ষীরা সড়ক ধরে পাক বাহিনীর একটি গাড়ী শো শো শব্দে বাজারের মোড়ে ঢুকে সোজা মালতিয়া মোড়ে এসে চিকন মোড়ল ও সুরেন কুণ্ডুকে প্রথমে গুলি করে। তারপর শুরু হয় একের পর এক গুলি আর গুলি। কথাগুলো প্রত্যক্ষদর্শী মালতিয়া গ্রামের শহীদ চিকন মোড়লের ছেলে এরশাদ আলী মোড়লের। মূহুর্তের মধ্যে লাল হয়ে উঠলো চুকনগরের মাটি। তারা পাতো খোলার, চুকনগরের বিলে, বলের মাঠে, বাজারের ভিতরে রায়পাড়া, মালো পাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে ও মন্দিরে ঢুকে নিরীহ মানুষকে অকাতরে গুলি করে হত্যা করে। ৭১ সালের ন্যক্কারজনক ঘটনা চুকনগরে গণহত্যা। এই দিনটির কথা স্মরণ করে চুকনগরবাসী আজও শিহরিত হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে সহায় সম্বল হারানোর শোকে মুহ্যমান। এই ভয়াল দিনটি চুকনগরবাসীর স্মৃতিতে আজও জাগরুল হয়ে আছে। গণহত্যা স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি এবিএম শফিকুল ইসলাম জানান, সেই দিনের সেই ভয়াবহ ধ্বংসযোজ্ঞ ও মর্মান্তিক দৃশ্যের কথায় আজও অনেকে চোখের জল ফেলেন। এই ভয়াবহ গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ লুটপাটের বেদনাঘন ইতিহাস মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাসে অম্লান ও ভাস্কর হয়ে থাকবে চিরকাল।
সর্বোপরি চুকনগরের স্বাধীনাতা প্রিয় মানুষ বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি'র নিকট চুকনগরের ঐতিহাসিক ঘটনা স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলে অন্তর্ভূক্ত করণ, গণহত্যা দিবসটি রাষ্ট্রীয় ভাবে পালনসহ সার্বিক উন্নয়নের সহযোগিতা কামনা করছেন।