সাটুরিয়ায় দেখা মিলেছে ভয়ঙ্কর রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ।

স্টাফ রিপোর্টার
0


জনসচেতনতায়, দৈনিক সারা দুনিয়া।


 মানুষের মধ্যে রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপের আতঙ্ক দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া এলাকায়ও এই বিষাক্ত সাপটির দেখা মিলেছে বলে জানা গেছে।

কৃষকরা ফসলসহ গবাদি পশুর খাবার সংগ্রহ করতেও ভয় পাচ্ছেন। একের পর এক বিষধর সাপটির দেখা মিলছে বিভিন্ন উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে। বিশেষ করে চরাঞ্চলে এই সাপের কামড়ে কয়েক মাসে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে। 

চন্দ্রবোড়া বা উলু বোড়া[২][৩] (বৈজ্ঞানিক নাম: Daboia russelii) ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বিষধর সাপ এবং উপমহাদেশের ভয়ঙ্কর চারটি সাপের একটি। চন্দ্রবোড়া ১৭৯৭ সালে জর্জ শ এবং ফ্রেডেরিক পলিডোর নোডার কর্তৃক বর্ণিত হয় এবং এবং প্যাট্রিক রাসেলের নামে এই সাপের ইংরেজি (Russell’s viper) নামকরণ করা হয়, যিনি ১৭৯৬ সালে তার An account of Indian serpents, collected on the coast of Coromandel[৪] বইয়ে চন্দ্রবোড়া সম্পর্কে লিখেছেন।

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আরেক নাম উলুবোড়া। বিষধর এ সাপ মাঝে কয়েক বছর খুব কম দেখা গেছে। তবে কয়েক বছর ধরে এর বিচরণ আবার বাড়ছে। আবার সাপটি এর স্বাভাবিক চরিত্রও বদলাচ্ছে।


গত এক মাসেই রাজশাহীর চারঘাট, গোদাগাড়ী, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, চাঁদপুরের মতলবসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখা পাওয়া গেছে রাসেলস ভাইপার। গত তিন মাসে পদ্মার তীরবর্তী মানিকগঞ্জে অন্তত পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন এ সাপের দংশনে। বিষধর এ সাপ নিয়ে দেশে এখন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

দেশে প্রায় ১০৪ প্রজাতির সাপ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৩০ প্রজাতির সাপ বিষধর। সবচেয়ে বিষধর হলো রাসেলস ভাইপার। চট্টগ্রামের ভেনম রিসার্চ সেন্টার তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, ভীষণ রকমের বিষাক্ত রাসেলস ভাইপার আছে ভারত, ভুটান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, চীন ও মিয়ানমারে। এ সাপ সাধারণত ঘাস, ঝোপ, বন, ম্যানগ্রোভ ও ফসলের খেতে বাস করে।

এই সাপের বিশেষত্ব হচ্ছে, এরা খুবই বিষাধর। কাউকে ছোবল দিলে এন্টি ভেনম দিলেও বাঁচার সম্ভাবনা ২০%.।।এন্টি ভেনম এটার টা নাই এ দেশে।


আর এই দেশের জলবায়ুতে প্রকিতৃতে এদের কোন অবদান  নাই।


 আরও ভয়ংকর ব্যাপার হল অন্যান্য সাপ সাধারণত নিজেরা আক্রান্ত হলে কিংবা সরাসরি কারও সামনে পড়লে ছোবল দেয় অন্যথায় কামড় দিতে আসে না বরং পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রাসেল ভাইপার দূরে থেকে মানুষ দেখলেও তেড়ে আসে আর কামড় দেওয়ার চেষ্টা করে।


অন্য সাপ ১ রকম বিষ ধারন করলেও,,রাসেল ভাইপারের বিষ একই সাথে ৫/৬ ধরনের হয়।


এই সাপ খুবই দ্রুত বংশ বিস্তার করে 


এরা সরাসরি বাচ্চা দেয়---৫০ থেকে ৮০ টি পর্যন্ত বাচ্চা দিতে পারে। 


সম্প্রতি,, রাজশাহী,, মানিকগঞ্জ,,,মাওয়া,,,পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় এই সাপের উপদ্রব বেড়েছে।


দেশে কয়েক বছর ধরে রাসেলস ভাইপারের বিচরণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে গাজীপুরের শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টারের সরীসৃপ-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ সোহেল রানা গণমাধ্যমকে বলেন, রাসেলস ভাইপার বরেন্দ্র অঞ্চলের সাপ বলেই পরিচিত ছিল। এটি মূলত শুষ্ক জায়গার সাপ। বরেন্দ্র অঞ্চলে এক ফসলি মাঠে ইঁদুর খেতে এর আনাগোনা ছিল বেশি। তবে এখন সেসব এলাকায় অন্য সময়েও ফসল হচ্ছে, ইঁদুর বাড়ছে।

প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বেড়েছে রাসেলস ভাইপারের। ফলে শুষ্ক অঞ্চল থেকে কচুরিপানার মতো যেকোনো ভাসমান কিছুর সঙ্গে ভেসে এটি নদীর ভাটির দিকে চলে যেতে পারছে। মূলত পদ্মা অববাহিকা ধরে এর সংখ্যা বাড়লেও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। হাতিয়া, ভোলায়ও এই সাপ দেখা গেছে ।

এই সাপ যেহেতু ডিম না দিয়ে সন্তান প্রসব করে, ফলে সাপের বাচ্চাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রাসেলস ভাইপার সাধারণত ফোঁস ফোঁস শব্দ বেশি করে। অন্য সাপ মানুষকে দংশনের পর সেখান থেকে দ্রুত সরে যায়, কিন্তু রাসেলস ভাইপার ঘটনাস্থল থেকে সরতে চায় না।


রাসেলস ভাইপার স্থলভাগের সাপ হলেও এটিকে পানিতে দ্রুতগতিতে চলতে দেখেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান। তিনি বলেন, এটি মাটি ও পানি উভয় স্থানে এখন স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে। প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখে ফেলেছে রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া)।

স্থানীয় ভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারীভাবে যদি এই সাপ নিধনের উদ্যোগ না নেয়া হয় তাহলে বর্ষার মৌসুমে সারা বাংলাদেশে এই সাপ ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)