কেশবপুরে পাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরি।

স্টাফ রিপোর্টার
0

 


পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর , দৈনিক সারা দুনিয়া।


কেশবপুর উপজেলার পাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস ও শ্রেণীকক্ষের তালা কেটে ১৫টি সিলিং ফ্যানসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে দূর্বৃত্তরা। 

চুরির বিষয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নিকট জানতে চাইলে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তাদের ধারনা পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং গরমের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় যেকোন সময় অজ্ঞাতনামা চোরেরা অফিস ও শ্রেনীকক্ষের দরজার তালা কেটে মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে। গত ২৭ এপ্রিল সকালে বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনা জানার পর অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও ইতিপূর্বে এ উপজেলার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটলেও এই পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠানের চুরির মালামাল উদ্ধার হয়নি।

জানা গেছে, কেশবপুর থানার মাদারডাঙ্গা গ্রামের রহিম বক্স মোড়লের ছেলে রেজাউল করিম (৪৭) পাথরঘাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এবং মনোহরনগর গ্রামের মৃত রহমত আলী গাজীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৩৫) দপ্তরী কাম প্রহরী হিসেবে কর্মরত আছেন। পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং প্রচন্ড গরমের জন্য সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী চলতি বছরের গত ১১ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করেন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী পাথরঘাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ দেওয়া হয়। গত ২৭ এপ্রিল সকালে  বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরী সিরাজুল ইসলাম অফিস ও শ্রেনীকক্ষে চুরির বিষয় জানতে পেরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষককে অবহিত করেন। সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেন অফিস ও শ্রেনীকক্ষের দরজার ৭টি তালা কাটা এবং বারান্দার গ্রীল বাঁকানো অবস্থায় রয়েছে। অফিস ও শ্রেনীকক্ষের ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন বিভিন্ন কোম্পানীর ১৫টি সিলিং ফ্যান, বৈদ্যুতিক ১০০ গজ মেইন তার, ২০০ গজ সাবলাইন তার ও ১০টি বাল্ব অজ্ঞাতনামা কে-বা কারা চুরি করে নিয়ে পালিয়ে গেছে।  

চুরির বিষয়ে পাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরী সিরাজুল ইসলামের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়িতে জরুরি কাজ থাকায় ২৬ এপ্রিল রাতে আনুমানিক দুইটার দিকে আমি প্রতিষ্ঠান থেকে চলে আসি। পরেরদিন সকালে স্কুলে গিয়ে দেখি প্রতিষ্ঠানের অফিস ও শ্রেণিকক্ষের তালা কেটে বিভিন্ন মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে। রাতে পাহারা দেওয়া আমার কাজ না, প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জোরপূর্বক আমাকে দিয়ে রাতে ডিউটি করান।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর এবং চলতি বছরে এ উপজেলার একাধিক সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। 

সেগুলো হলো- উপজেলার মানিকপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৭টি সিলিং ফ্যান ১টি ব্যাটারী ও কয়েকটি প্লেট। চাঁদডাঙ্গা-শ্রীফলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২১টি ফ্যান ও একটি ঘন্টা। সন্যাসগাছা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫টি ফ্যান ও ৮টি পানির টব। আগরহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১ম বার ২০টি ফ্যান দ্বিতীয়বার ২২টি ফ্যান, ১৮টি দরজা জানালার পর্দা ও ১টি কেটলি। আলতাপোল মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০টি ফ্যান, ১টি ঘন্টা ও ১টি তোয়ালে। ভোগতী-নরেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৮টি ফ্যান ও ১টি পানির মোটর। বাউশলা পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৮টি ফ্যান, ১টি ঘন্টা ও কয়েকটি তোয়ালে। বেলকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৭টি ফ্যান। শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১২টি ফ্যান ও রেজাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৮টি ফ্যান চুরি করে নিয়ে গেছে অজ্ঞাতনামা চোরেরা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার শেখ আব্দুর রব বলেন, গতবছর ও চলতি বছরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চুরির ঘটনায় থানায় একাধিক জিডি ও অভিযোগ করা হয়েছে। আমার জানামতে আজও পর্যন্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চুরির মালামাল উদ্ধার হয়নি। আমার ধারণা সংঘবদ্ধভাবে একের পর এক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চুরি করা হচ্ছে। 

এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম বলেন, পাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরি হওয়ার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। চুরির ঘটনা উদঘাটনের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উপজেলায় চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রুখতে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানোর পাশাপাশি থানা পুলিশ ব্যাপক তৎপর রয়েছে।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)