পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর, দৈনিক সারা দুনিয়া।
ঋতু যাই হোক, মহাপুরুষরা বিপদকালে অশুভ শক্তির বিনাশের উদ্দেশ্যে আদ্যাশক্তির আরাধনা করেছেন। ‘রামায়ণ’-এ শ্রী রামচন্দ্র শরৎ কালে অশুভ শক্তি নাশ করতে দেবীর আরাধনা করেন। পুরাণ অনুযায়ী চিত্রবংশীয় রাজা সুরথ বসন্ত কালে দেবীর আরাধনা করেন। কালের পার্থক্য হলেও আরাধনা দেবী দুর্গারই। শরৎকালে শারদীয়া দুর্গাপূজা, বসন্ত কালে শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজা।
কেশবপুর উপজেলায় সাতদিন ব্যাপী রোববার (১৪ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে দর্পন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজা। এ বছর এই উপজেলার ৭টি পুজা মণ্ডপে ব্যাপক ধুম ধামের মধ্য দিয়ে বাসন্তী পুজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে মঙ্গলকোট ইউনিয়নে ১টি, ত্রিমোহিনী ইউনিয়নে ২টি, পাঁজিয়া ইউনিয়নে ২ টি, গৌরিঘোনা ইউনিয়নে ১টি ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ১টি মণ্ডপে।
কেশবপুর পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় বলেন, এবার উপজেলায় মোট ৬ টি সার্বজনীন ও ১ টি পারিবারিক মন্দিরে পূজা হচ্ছে। ১ নং ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর কুণ্ডুপাড়া বাসন্তি মন্দির ও শ্রীরামপুর হরিতলা পূজা মন্দির, ৫ নং মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বসুন্তিয়া তারকেশ্বর পূজা মন্দির, ৭ নং পাঁজিয়া ইউনিয়নের মাদারডাঙ্গা গ্রামের সুকুমার পালের বাড়িতে সার্বজনীন বাসন্তি মন্দির ও অসিত পাল গংদের বাড়িতে পারিবারিক বাসন্তি মন্দির, ৯ নং গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ভেরচি বাসন্তি মন্দির, ১০ নং সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ভালুকঘর ঠাকুরবাড়ি।
মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বসুন্তিয়া গ্রামে ঐতিহ্যবাহী সার্বজনীন তারকেশ্বর পূজা মন্দিরে শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজা রোববার থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে দর্পন বিসর্জ্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো। বিকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত চলেছে সিঁদুর খেলা, ভক্তিমূলক গানের পালা, খেলাধূলা, গান-বাজনা, নাচ, কমিক, কৌতুক এবং পুরস্কার বিতরণ।
পূজা মন্দির কমিটির সভাপতি মাস্টার সুজিত কুমার সরকার জানান, পঞ্জিকায় লেখক, গণক, চণ্ডী পাঠক ও গবেষক তারকনাথ ভট্টাচার্যের নামানুসারে বাংলা ১৩৫৫ সালে এই মন্দিরটি স্থাপন করা হয়। সে অবধি এখানে চলে আসছে শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজাসহ আরও অনেক পূজা। লেখক, গণক, চণ্ডী পাঠক ও গবেষক হিসাবে প্রয়াত তারকেশ্বর ভট্টাচার্যের নাম পঞ্জিকায় লিপিবদ্ধ ছিল।
মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিশ্বনাথ হালদার ও সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ হালদার জানান, ভক্তদের অনুদানে মন্দির সংষ্কারের কাজ অনেকাংশে এগিয়ে যাওয়ায় মন্দিরটি দৃশ্যমান হওয়ায় ভক্তরা আরও আনন্দিত হয়েছেন। তারা মন্দির সংস্কারকাজ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
পূজা মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি বাসুদেব দাস জানান, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, এখানে এই শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজা ৭৫ তম বছর অতিক্রান্ত করলো। বহু দূর থেকে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ এখানে পূজা দেখতে আসেন।
পূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার প্রদীপ কুমার দেবনাথ জানান, ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরে বৃহস্পতিবার সকালে যাত্রামঙ্গল শেষে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে মায়ের কপালে সিঁদুর, আরতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়েছে।
তারকেশ্বর পূজা মন্দির কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রায় জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পাঁচ দিন ব্যাপী শ্রী শ্রী বাসন্তী পূজা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কোষাধ্যক্ষ উত্তম রায় জানান, অষ্টমী পূজার রাত থেকে চলেছে ভাগবত পাঠের অনুষ্ঠান এবং বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে মায়ের কপালে সিঁদুর, আরতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে পুরষ্কার বিতরণ। তাছাড়া প্রতিদিন ছিল ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ।
পাঁজিয়া ইউনিয়নের মাদারডাঙ্গা গ্রামের সুকুমার পালের বাড়িতে সার্বজনীন হিসাব বাসন্তী পূজা হয়েছে। মাস্টার সুশান্ত পাল বলেন, এই মন্দিরে শতাধিক বছর ধরে পূজা হচ্ছে। এখান পূজার কার্যে নিয়োজিত আছেন, পাঁজিয়া গ্রামের পুরোহিত গোবিন্দ ব্যানার্জি ও মুকুন্দ ব্যানার্জি। একই গ্রামে অসিত পালের বাড়িতে ৪ ভাই মিলে পূজা করছেন। তিনি বলেন, আমরা এই পারিবারিক মন্দিরে ৪১ বছর ধরে পূজা করে আসছি। পুরোহিতের দ্বায়িত্বে আছেন, পাঁজিয়া গ্রামের সমীর ব্যানার্জি। বসুন্তিয়া সার্বজনীন তারকেশ্বর মন্দিরের সহ-সভাপতি অশোক পাল জানান, এই মন্দিরে পূজা কার্যে নিয়োজিত আছেন, পাঁচারই গ্রামের মিহির চক্রবর্তী ও অশোক চক্রবর্তী।