পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর, দৈনিক সারা দুনিয়া।
সাগরদাঁড়ি মধুমঞ্চে আলোচনা সভা ও "মহাকবি মধুসূদন পদক" প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মধুমঞ্চে মধুসূদন পদক পেলেন যশোরের মেয়ে কবি সুহিতা সুলতানা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০তম জন্মবার্ষিকীতে ‘মহাকবি মধুসূদন পদক’ পেলেন কবি সুহিতা সুলতানা। সৃজনশীল সাহিত্য (কবিতা) ক্যাটাগরিতে ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থের জন্য তাঁকে এ পদক দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারী) রাতে মধুমেলার সপ্তম দিনে সাগরদাঁড়ির মধুমঞ্চে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হেলাল মাহমুদ শরীফ তাঁর হাতে মহাকবি মধুসূদন পদক, সনদপত্র ও ১ লাখ টাকার চেক তুলে দেন।
তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো-দাঁড়াও পথিকবর (যৌথ), দুঃসহ শুদ্ধতা, অবিরাম শোকার্ত স্বপ্নেরা, অসংখ্য অভিশাপ নিদ্রার ভেতরে, হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে বিষঘুম, শূন্যতার এক আশ্চর্য মহিমা, নির্বাচিত কবিতা, ভাসে বহুবিধ খেলা, কবিতা সমগ্র-১. প্রেম ও বিরহের কবিতা, ঘাস হয়ে জেগে থাকে প্রাণভূমি, স্বপ্নবৃত্তান্ত, কোন এক হেমন্তের দিনে, হে দলের অবগুন্ঠন, নৈঃশব্দ্যের এক মধ্যদুপুর, মার্বেলঘুড়ি, জলকপাট, অনন্ত স্বপ্নের ভেতরে, হারিকেনজাল, হাঁসকল, দলে ভরা মেঘের দিকে, অগ্নিমোম, কোয়ারেন্টাইন ও অনিদ্রার খসড়া। সুহিতা সুলতানা-এর সমৃদ্ধ সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে চারটি উপন্যাসও- মুখোশের আড়ালে নরনারীগণ, মানবান্ধ, মুক্তিযুদ্ধ ও একা একজীবন এবং ধ্বংসবীদ। তার প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সুহিতা সুলতানার গদ্য সংগ্রহ (প্রথম), গ্রন্থ প্রকৃতি বিজ্ঞান ও মন, এবং গদ্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ। এছাড়া তিনি ১৯৪৫-১৯৯৫ ঘাটজন কবির কাব্যচিন্তন নামে একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। বিশিষ্ট কবি সুহিতা সুলতানা ১৯৬৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর যশোর সদর উপজেলার শংকরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমান যশোর উপশহরের স্থায়ী বাসিন্দা শেখ বোরহান উদ্দিন আহমেদ ও সৈয়দা রেবেকা সুলতানা দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান তিনি। সুহিতা সুলতানা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ (অনার্স), এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পেশাগত জীবনে তিনি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ঢাকার উপপরিচালক হিসেবে গ্রন্থোন্নয়ন সম্পর্কিত গবেষণাধর্মী বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত আছেন। বাংলা ভাষার পাশাপাশি নরওয়োজিয়ান, রুশ ও হিন্দি ভাষায় চর্চা করেন তিনি।
যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার-এর সভাপতিত্বে এবং যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার সুমাইয়া জাহান ঝুরকা ও বাংলাদেশ বেতার খুলনার আবৃত্তি শিল্পী মাসুদুর রহমান-এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, যশোর জেলার সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির, কেশবপুর পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল, যশোরের রামকৃষ্ণ আশ্রম ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী জ্ঞানপ্রকাশানন্দ এবং যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (বাংলা বিভাগ) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
আলোচনা করেন, সাগরদাঁড়ির মধুসূদন একাডেমির পরিচালক খন্দকার খসরু পারভেজ, যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ লিটু, যশোর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি দীপংকর দাস রতন ও নওয়াপাড়া কলেজের অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) কাজী শওকত শাহী।
অনুভূতি প্রকাশ করেন ২০২৪ সালে ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থের জন্য সৃজনশীল সাহিত্য (কবিতা) ক্যাটাগরিতে মহাকবি মধুসূদন পদক প্রাপ্ত কবি সুহিতা সুলতানা।
উল্লেখ্য, ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোরের কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্ম নেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আগামী ২৭ জানুয়ারী শণিবার পর্যন্ত সাগরদাঁড়িতে নয়দিন ব্যাপী এ মধুমেলা অনুষ্ঠিত হবে।