পরেশ দেবনাথ, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, দৈনিক সারা দুনিয়া।
বাংলা সাহিত্যের অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত-এঁর ২০০তম জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা-২০২৪ উপলক্ষে ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে ২৭ জানুয়ারি শণিবার ৯ দিন ব্যাপী যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে শুরু হয়েছে মধুমেলা। আবহাওয়া খারাপ থাকায় মধুপ্রেমীদের উপস্থিতি ছিল বেশ কম, ব্যবসায়ীরা ছিল চিন্তিত। মেলা সফল করতে জেলা প্রশাসন, কেশবপুর উপজেলা প্রশাসন ও মধুসূদন একাডেমী সাগরদাঁড়িতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মেলা প্রাঙ্গনে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ছিল খুব ভাল।
মেলা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা যায়, মধুমঞ্চে সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠানমালায় অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠানমালায় ছিল, কেশবপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার প্রভাত কুমার রায় ও যশোর উদীচীর অনুষ্ঠান সম্পাদক কাজী শাহেদ নওয়াজ-এর উপস্থাপনায় প্রথম পর্ব দুপুর ২ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কেশবপুর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল, কেশবপুর আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, কেশবপুর সপ্তসুর একাডেমি, কেশবপুরের ভালুকঘর বসন্ত একাডেমি ও কেশবপুর বিপ্রতীক সাহিত্য পরিষদ। বিকাল ৪ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত যশোর জেলা সদরের অংশগ্রহণকারী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল, মুক্তেশ্বরী সঙ্গীত, কিংশুক সঙ্গীত, সঙ্গীত, শেকড় নৃত্য, মা নৃত্যালয় নৃত্য, শেকড় নাটক এবং শিল্পীসৃষ্ঠি নাটক।
অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলগুলোর মধ্যে ছিল, বাগেরহাট শিল্পকলা একাডেমি, ঝিনাইদহ শিল্পকলা একাডেমি, চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমি, সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমি এবং নড়াইল দিদারুল ইসলাম বয়াতীর জারিগান ও যশোর দি চ্যালেঞ্জার অপেরা কতৃক আয়োজিত যাত্রাপালা "নিঃসংগ লড়াই"।সমন্বয়ক ছিলেন, কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সাগরদাঁড়ি মধুমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মোঃ তুহিন হোসেন।
মধুমেলার বিভিন্ন স্টলের মধ্যে ছিল, সার্কাস, প্যান্ডেলের বাইরে হাতি দিয়ে দর্শনার্থীদের সম্মান করা, সাইকেল রেস, ডিজিটাল যাদু, বিভিন্ন ধরনের নাগরদোলা, নৌকা বিলাস, ইঞ্জিন ট্রেন, মিষ্টি-মিষ্টান্য, হরেক রকমের ভাজা, বাদাম, চাটনী, পোশাক-পরিচ্ছদ, বেলুন, লেপ-তোষক, হাড়ি-কড়াই, থালা-গ্লাস, প্লাস্টিকের বিভন্ন ধরনের জিনিসপত্র, হোটেল-রেস্তোরাঁ, জুতা, লৌহজাত বিভিন্ন ধরণের জিনিসপত্র, বিউটি পার্লার, খাট-পালঙ্গ, কুঠির শিল্প ও গ্রামীণ পসরা নিয়ে মেলায় বসছে বিভিন্ন ধরনের স্টল। এবারের মধুমলায় কৃষি স্টল না থাকায় মধুপ্রেমীদের অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সামনের বছরে কৃষি স্টলটি রাখার জন্য কতৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা, যিনি মধুসূদন-এর ওপর কাজ করেন আলোকচিত্রকর মুফতি তাহেরুজ্জামান বলেন, সারা দেশে শৈত প্রবাহের কারণে লোকজন বেশ কম। মধুপল্লীর দোকানদারেরা বলছেন, শীতের কারণে লোকজন কম আসছেন সে কারণে বেচাকেনাও কম হচ্ছে। সব মিলিয়ে শৈতপ্রবাহ এভাবে চলতে থাকলে স্টল ক্রয়কারীদের খানিকটা ক্ষতি হবে বলে অনেকে জানান।
মাইকেল মদুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন জমিদার। ১৮৭৩ সালে ২৯ জুন কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মাইকেল মদুসূদন দত্তের কালজয়ী রচনাবলীর অন্যতম হলো-মেঘনাদবধ কাব্য, শর্মিষ্ঠা, ক্যাপটিভ লেডী, কৃষ্ণকুমারী, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো, বীরাঙ্গনা। এ মহাকবির জন্মের কারণেই সাগরদাঁড়ি ও কপোতাক্ষ নদ জগৎবিখ্যাত। কালের প্রবাহে কপোতাক্ষ নদের যৌবন বিলীন হলেও মাইকেলের কবিতার কপোতাক্ষ নদ যুগে যুগে বয়ে চলেছে। ৯ দিন ব্যাপী মধুমেলা উপলক্ষে কবির জন্মভূমির স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদ, জমিদার বাড়ির আম্রকানন, বুড়োকাঠ বাদাম গাছতলা, বিদায় ঘাটসহ মধুপল্লী হাতছানি দিয়ে ডাকছে মধু ভক্তদের। বর্ণিল সাজে সেজেছে সাগরদাঁড়ি।