পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর, দৈনিক সারা দুনিয়া।
যশোরের কেশবপুরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভা শুরুর আগে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পাশে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমীন সভাপতিত্বে এবং দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, অনুষ্ঠানের সভাপতি। বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি তপন কুমার ঘোষ মন্টু। অনুষ্ঠানে সদ্য সমাপ্ত যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে সংসদ সদস্য পদে অংশগ্রহনকৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নেতৃবৃন্দদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।অনুষ্ঠানে দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি সৈয়দ নাহিদ হাসান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ স্বপন কুমার মুখার্জী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ দপ্তর সম্পাদক মনোজ কুমার তরফদার, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মহিবুর রশীদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এস এম বাবুর আলী, কার্যনির্বাহী সদস্য শেখর রঞ্জন দাস, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাবেয়া ইকবাল, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন, উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক রমেশ দত্ত, সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম সরদার, হাসানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক জি এম সিরাজুল ইসলাম, পাঁজিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ আল বাহার, সুফলাকাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মনি, মজিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মশিয়ার রহমান পিরু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালিম, মঙ্গলকোট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান সরদার, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান মাসুদ, বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম- আহবায়ক রফিকুল ইসলাম, মহিলা কাউন্সিলর খাদিজা খাতুন, ইউপি সদস্য শাহানাজ পারভীন, মঙ্গলকোট ইউনিয়ন যুব লীগের যুগ্ন-আহবায়ক আল হেলাল প্রমূখ।
এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এদিন তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর পাকিস্তানের কারাগারে তিনি এর আগে ৮ জানুয়ারি মুক্তি লাভ করেন। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান এবং দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, এদিন দুপুর আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করেছে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাঁকে গ্রেপ্তার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধুকে বিমানে তুলে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন। দশ তারিখ সকালেই তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, প্রধান নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তাঁর এই স্বদেশ আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। পরের দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লিখা হয়- 'স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু'চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।'