কেশবপুরের ঘরে ঘরে কুমড়ার বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত গ্রামের বধুরা।

স্টাফ রিপোর্টার
0

 


পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর, দৈনিক সারা দুনিয়া।


কেশবপুরের ঘরে ঘরে এখন কুমড়ার বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত গ্রামের বধুরা। কুমড়ো বড়ি খেতে কে না পছন্দ করেন। কিন্তু বানানো অনেক কষ্ট আর ঝামেলা বলেই অনেকেই বাজার থেকে কিনে খান। খোলা বাজারের কেনা বড়ির স্বাদ কেমন হয় সেটা যারা খায় তারাই ভালো জানেন। ঢেঁকির চল না থাকায় মা খালাদের ঘরে বড়ি বানানোর রেওয়াজ দিন দিন কমেই যাচ্ছে। আধুনিক ডিজিটাল যুগে কলাই মাড়াই মেশিন উঠায় অনেকে মনে করেন আগের চেয়ে বড়ি বানানো চল বেড়েছে। কলাই-চালকুমড়া মাড়াই করতে বেশি সময় লাগে না। 

বিভিন্ন স্থানে কুমড়ার বড়ি তৈরী করার উপকরণ মাড়াই করার জন্য মাড়াই মেশিন স্থাপন করায় গৃহবধুদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। মঙ্গলকোট বাজারের মিল মালিক প্রনব কুমার সরকারের সাথে সাক্ষাতে দেখা যায়, কুমড়ার বড়ি তৈরীর উপকরণ মাড়াই করতে নিয়ে এসেছেন, বসুন্তিয়া গ্রামের সুভাষ পাল ৩ কেজি, তরুণ বিশ্বাস ২ কেজি, তরিকুল ইসলাম ৩ কেজি, আমেনা ২ কেজি, আব্দুল সাত্তার সরদার ৩ কেজি, পরেশ দেবনাথ ২ কেজি, শুভ দীপ পাল ২ কেজি, পাঁচপোতা গ্রামের, দিবস সিংহ আড়াই কেজি, অঞ্জনা রাণী ১ কেজিসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজনেরা। মিল মালিক জানান, প্রতিদিন ৫০/৬০ কেজি করে মাড়াই করি। আবার স্থানীয় কুমাররা যখন পাজা পোড়াই তখন স্থানীয় লোকেরা বেশি মাড়াই করে। কারণ, আকাশ খারাপ থাকলেও টিনে বড়ি দিয়ে পাজার উপর দিলে তাড়াতাড়ি বড়ি শুকিয়ে যায়। 

মাসকলাই ডাল আর চালকুমড়ার মিশ্রনে যে বড়িটা তৈরি হয় তার স্বাদ অতুলনীয়। ঠিক কবে থেকে বাঙালির রান্নাঘরে বড়ির আগমন তা জানা যায় না। তবে প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন তরকারির সঙ্গে বড়ির ব্যবহার হচ্ছে। শাকের সাথে চিংড়ি মাছ বড়ির গুণে বদলে যায় রান্নার স্বাদ। মূলত শীতকালে কলাইয়ের ডাল, খেসারির ডালের বড়ির ব্যবহার মূলত বেশি।

কুমড়ার বড়িতে অনেক গুণ আছে। বড়িতে যে ঘরোয়া মশলা মেশানো হয় অর্থাৎ জিরে, আদা, মরিচ এই সবগুলোর নানা উপকারিতা আছে। এছাড়াও স্বাদ ফেরাতে খুব ভালো সাহায্য করে বড়ি। শীতে ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি কাশি অনেকেরই হয়। রোগজীবাণুর প্রকোপ থেকে রক্ষা করতেও ভূমিকা রয়েছে বড়ির।

ডাল সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হয়। চালকুমড়া কেটে কুরিয়ে পানি ঝরানোর জন্য কাপড় দিয়ে বেঁধে সারা রাত চাপ দিয়ে রাখতে হয়। সকালে পরিমান মত কচু কুচিয়ে মিশিয়ে মাড়াই মেশিনে দিলে দ্রুত মাড়াই করা যায়। অনেকে পাটায় বেটে নেয়। অনেকে এর সঙ্গে লবণ, মরিচ, জিরা গুঁডা, কালজিরা, আদা, রসুন মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে মাড়াই করে নেয়। এরপর  ছাদের উপর বা রৌদ্রের খোলা স্থানে বা চালার উপর কাপড়, পাতায়  চালা ওই মিশ্রণ নিয়ে হাত দিয়ে বড়ি দিতে হয়। এরপর রোদে তিন দিন টানা শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়। রান্না মাঝামাঝি হয়ে আসলে বড়ি ভেজে তরকারিতে দিতে হয়।

গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড়ির বেশ গুরুত্ব রয়েছে। গ্রামাঞ্চল থেকে শহর এখন সবখানে বড়ি পাওয়া যায়। অনেকেই অনলাইনে বড়ি বিক্রি করেন শীতকালে বড়ির বিক্রি সবথেকে বেশি।

সরেজমিন বড়ি দিতে দেখা যায়, বসুন্তিয়া গ্রামের উষা রানী, সন্ধ্যা রাণী, ছায়া রাণি, অঞ্জনা রাণীকে। মঙ্গলকোট গ্রামের বিলকিস, রওশনারা, সুইট ও আছিয়া বেগমের সাথে। পাথরা গ্রামের পঞ্চি রাণী, সুন্দরী বালা, শান্তি রাণীর সাথে। এ ভাবে বিভিন্ন গ্রামের বধুরা ঘরে ঘরে কুমড়ার বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)