পরেশ দেবনাথ, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, দৈনিক সারা দুনিয়া।
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় বিস্তৃত শরিষা ফসলে মাঠ জুড়ে হলুদের সমারোহ। সরিষার ভালো ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকরা উৎফুল্ল। নৈস্বর্গিক রূপের আবহাওয়ায় দিগন্ত ছুঁয়েছে, সরিষা ফুলের গন্ধে বিভোর সারা মাঠ। কেশবপুরের ১১ টি ইউনিয়নের বিস্তৃত মাঠ জুড়ে বারি সরিষা চাষের উৎসবে মেতেছেন কৃষকরা। মাঠে মাঠে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত সরিষার ক্ষেত। হলুদ সরিষার ফুলে ফুলে ঘুরছে মৌমাছির দল। ভোঁ ভোঁ শব্দ তুলে দলে দলে তারা এক ফুল থেকে আরেক ফুলে উড়ে মধু সংগ্রহ করে। মৌমাছির পরাগায়নের ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে শরিষার ফলন। মধু আহরণকারীরা মধু আহরণে ব্যস্ত।
সরিষার ভালো ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে এ বছর গত ২৬ অক্টোবর ৪ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ২ কেজি করে শরিষার বীজ ও স্যার বিতরণ করা হয়েছে। গত বছর এ উপজেলায় ১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর সরিষার আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে। সেই হিসেবে এ বছর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ৫৭ হেক্টর জমি। গত বছরের চেয়ে এ বছর বেড়ে ৫০৫ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা আবার করেছেন কৃষকরা। কৃষকের মাঠে আগাম জাতের বারি সরিষা চাষে ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কেশবপুরের কৃষকরা বোরো আবাদের আগে একই জমিতে বারি-১৪, বারি-৯, বারি-১৮, বারি-১৭ ও টরি-৭ জাতের সরিষা চাষ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে, আর সরিষার বাম্পার ফলন ঘরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত কৃষক লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি অধিক ফলনশীল বারি-১৪,ও বারি-৯ জাতের এি সরিষা চাষ করে কৃষকেরা বোরো আবাদের খরচ উঠিয়ে নেয়। এ বছর নতুন করে টরি-৭ বারি- ৯,বারি বীনা- ৯, বারি-১৭ ও বারি -১৮ জাতের উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষ শুরু করেছে। এ সব জাতের সরিষা ৭০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে কৃষকরা ঘরে তুলতে পারেন। যার ফলে কৃষকরা সরিষা চাষের পর বোরো আবাদ করতে পারেন, যে কারণে উপজেলা ব্যাপী কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন। উপজেলার সাগরদাঁড়ী ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির সাবু, আবুল কালমা আজাদ, গোপসেনা গ্রামের কৃষক আজিবার রহমান সানা, জালাল সানা, ফতেপুর গ্রামের কৃষক আবুল সানা, ওজিয়ার সরদার, বাগদাহ গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল, হাবিবুর রহমান, প্রতাপপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস, কাকিলাখালী গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন, দেউলি গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান, রেজাউল ইসলাম, মজিতপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর সরিষা চাষ করা হয়। ইরি বোরো মৌসুমের আগেই সরিষা তুলে সেই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করে থাকেন কৃষকরা। তবে চলতি বছরে সরিষার চাষে বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। সাতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন, ময়েজ উদ্দিন , রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল সরদার, আজিজুর রহমান, ব্রহ্মকাটি গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম খাঁ, তপন বসু বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরে বৃষ্টির পানি কম থাকলেও সরিষা ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিঘা প্রতি জমিতে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৬ থেকে ৭ মন সরিষা পাবেন বলে তারা ধারণা করেছেন। বাজারের সরিষার দাম ভালো পাওয়া যাবে কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ অর্জিত হয়েছে । অধীর দাম ও বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা সরিষা আবাদে ঝুঁকেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা আক্তার জানান, এ বছর ৪ হাজার কৃষকের মাঝে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ২ কেজি করে শরিষার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আজ দু'দিন আবহাওয়া খারাপ চলছে। তবে ফুলের মুখে যদি ভারী বৃষ্টিপাত হয় সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষকরা। আমরা প্রতিনিয়ত এলাকায় গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে চলেছি।