পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর, দৈনিক সারা দুনিয়া।
কেশবপুরে জমজ দুই সন্তানকে জীবন্ত হত্যার দায়ে কেশবপুরে জমজ দুই সন্তানকে জীবন্ত হত্যার দায়ে পাষণ্ড মাকে থানায় আটক করেছে কেশবপুর থানা পুলিশ। যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার পৌর ১নং ওয়ার্ড সাহাপাড়া (কুলুপাড়া) এলাকায় আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী সুলতানা ইয়াসমিন (২৭)-কে আটক করা হয়। আসামী বিষয়টি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সুলতানা ইয়াসমিন কেশবপুর সদরের সাহাপাড়া নতুন মসজিদ এলাকার বাসিদা আব্দুল লতিফ হাওলাদারের কন্যা। আবু বক্কর সিদ্দিক তার স্ত্রীকে নিয়ে শশুর আব্দুল লতিফের বাড়িতে থাকতো।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল-২১ ইং তারিখে বিবাদী সুলতানা ইয়াসমিন-এর সাথে আবু বক্কর সিদ্দিক-এর বিবাহ হয়। দুইজনের বিয়ের পূর্বে তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বিবাহ ছিল। বিবাদী সুলতানা-এর প্রথম পক্ষের একটি কন্য সন্তান আছে। যার নাম অহনা ইয়াসমিন (১১)। আবু বক্কর সিদ্দিক এর সাথে বিয়ে হবার পর বিবাদী বুঝতে পারে তার স্বামী অন্য নারীতে আসক্ত। তাই সে স্বামীকে সুপথে ফেরাতে বাচ্চা নেওয়ার চিন্তা করেন। যার সূত্র ধরে তার গর্ভে সন্তান আসে। বিবাদী চিন্তা করেন তার সন্তান ভূমিষ্ট হলে স্বামীর স্বভাবের পরিবর্তন হবে।
গত ১০ নভেম্বর-২৩ তারিখে স্থানীয় কেশবপুর মাতৃমঙ্গল ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে বিবাদীর জমজ সন্তান জন্ম লাভ করে। যার মধ্যে ০১টি পুত্র এবং ০১ টি কন্যা সন্তান। বাচ্চা দুটি নির্ধারিত তারিখের অনুমান দেড় মাস পূর্বেই জন্মগ্রহণ করে এবং অসুস্থ্যতার কারণে চিকিৎসার পর মঙ্গলবার (২১নভেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে নিস্তেজ পুত্র সন্তানটি বাড়ির সামনে দক্ষিন পাশের ডোবায় নিক্ষেপ করে। পরে ঘরে ফিরে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন এবং কন্যা সন্তানটিকেও সকলের অগোচরে একই ডোবায় জীবন্ত নিক্ষেপ করেন। এর পর ঘরে ফিরে বাচ্চাদের পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে মিথ্যা কাহিনীর সৃজন করে। বিবাদীর পিতা আব্দুল লতিফ থানায় ফোন করে বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানায়। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে খোঁজা-খুঁজির একপর্যায়ে বাড়ির দক্ষিন পাশের ডোবা প্রথমে পুত্র সন্তানটির মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক সুরতহাল প্রস্তুত করেন এবং অপর নিখোঁজ বাচ্চাটিকে খুঁজতে থাকেন। পরবর্তীতে কন্যা সন্তানটিকেও মৃত অবস্থায় একই ডোবা হতে উদ্ধার করা হয়।
অতপরঃ প্রাথমিক ভাবে বিবাদী সুলতানা ইয়াসমিন সহ তার পরিবারের সকল সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে বিবাদী তার মৃত পুত্র সন্তানসহ জীবিত কন্যা সন্তানটিকে অগচরে ডোবায় নিক্ষেপের কথা স্বীকার করেন।
বিষয়টি নিয়ে আরো ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ অব্যহত আছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রতিয়মান হয় যে, বিবাদী সুলতানা ইয়াসমিন স্বামীর সাথে পারিবারিক কলহের জেরে মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে নিজ সন্তানদের ডোবায় নিক্ষেপ করে হত্যা করেন। এ বিষয়ে মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলমান আছে।
এব্যাপারে কেশবপুর থানায়, সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে যশােরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন) বেলাল হোসাইন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার মা সুলতানা খাতুন তার দুই শিশু সন্তানকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে।