পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর, দৈনিক সারা দুনিয়া।
কেশবপুরের মঙ্গলকোট ইউনিয়নে কার্তিকের খেঁয়া নামক স্থানে বাঁশের চারটি ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে অবশেষে মেরামত হলো।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে যেয়ে দেখা গেছে, আপার বুড়ীভদ্রা নদীর ওপরে বাঁশের চরাট দ্বারা নির্মিত চারটির উত্তর পাশের কিছু অংশ ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে, দু'টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সাতটি গ্রামের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের ভিতর জীবন-যাপন করছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে পাঁচারই টি,এস (তরুণ সংঘ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক , পাঁচারই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, এলাকার ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দিন গোলদার, পাঁচারই ফকির বাড়ির পাগলের থানের বর্তমান খাদেম সহকারী অধ্যাপক ফকির জালাল উদ্দীন আহম্মেদ, মঙ্গলকোট ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাদের বিশ্বাসসহ অন্যান্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পথচারীদের সাথে কথা হয়। তাদের সকলের দাবী, চারটি সংস্কারসহ স্থায়ী সমাধান।
শণিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি অনলাইনসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টিতে পড়ে। তিনি বিষয়টি জরুরী ভিত্তিতে সংস্কারের জন্য মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বিশ্বাসকে অবহিত করেন। ইউপি চেয়ারম্যান এলাকা ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দিন গোলদারকে চারটি দ্রুত সংস্কারের কথা বলেন। ইউপি চেয়ারম্যানের অর্থায়নে এবং ইউপি এলাকা সদস্যের আন্তরিকতায় কাজটি বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সংস্করণ করে মানুষের ভোগান্তি আপাততঃ দূর করেন। এ কাজে বসুন্তিয়া ও পাঁচারই গ্রামের স্বহৃদয় ব্যক্তিরা চারটি মেরামতের জন্য বাঁশ দান করে সহযোগিতা করেছেন।
যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বসুন্তিয়া-পাঁচারই গ্রামের বুক চিরে বয়ে চলেছে বুড়ি ভদ্রা নদী। এই নদীর ওপর কার্তিকের খেঁয়া নামক স্থানে বাঁশ নির্মিত একটি চার দেওয়া আছে যা ইতিমধ্যে একপাশ ভেঙ্গে পড়েছিল। ওই চার দিয়ে সাত গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ও দু'টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলাচল করে আসছিল। কিন্তু তিন/চার মাস আগে থেকে চারটির ভাঙ্গন শুরু হয়ে প্রায় এক মাস আগে এটির উত্তর পাড়ের কিছু অংশ একেবারে ভেঙে পড়েছিল। এতে ওই চার দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে আসছিল কোমলমতি শিক্ষার্থীরা-সহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শিক্ষার্থীদের দুই/আড়াই কিলোমিটার ঘুরে বড়েঙ্গা ব্রীজ পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছিল। তাছাড়া পাঁচারই গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ফকির বাড়িতে বসে তিন দিনের লোকজ মেলা। মেলাটি ৫ বৈশাখ থেকে ৭/৮ দিন ধরে চলায় প্রচুর লোক এই চার দিয়ে পারাপার হয়।
একসময় নদীর এপার-ওপার যাত্রীদের পারাপার করতো মাঝি কার্তিক সরকার (পাটনি) গংরা, সে থেকে এই খেয়ায়াঘাটের নামকরণ হয় কার্তিকের খেয়া। তখন নদী ছিল খরস্রোতা, কালের বিবর্তনে পলি পড়ে এখন আর সেই জৌলুশ নেই। এলাকার সচেতন স্বেচ্ছাসেবী মহল নদীর উপর গড়ে তুলেছিলেন বাঁশের চরাট দ্বারা নির্মিত চার। জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় চারটি এখন সাত গ্রামের মানুষের দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এলকাবাসী জানান, উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়নের পাঁচারই, বসুন্তিয়া, রামকৃষ্ণপুর, কেদারপুর, পাথরা, চুয়াডাঙ্গা, ঘাঘা গ্রামের মানুষ এই চার দিয়ে চলাচল করেন। ইউনিয়নের কেন্দ্রস্থলে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, মঙ্গলকোট বাজারে এই সকল গ্রামের মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে চার পার হয়ে আসেন।
তা ছাড়া পাঁচারই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫/১৬ জন এবং পাঁচারই টি,এস (তরুণ সংঘ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩৫/৪০ জন শিক্ষার্থী এই সেতু পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতো এখন তাদের দুই/আড়াই কিলোমিটার ঘুরে বড়েঙ্গা ব্রীজ পার হয়ে কষ্ঠ করে আসতে হবে না। বিদ্যালয় দু'দিন বন্ধ থাকায় রোববার থেকে ঐ বিদ্যালয় দু'টির শিক্ষার্থীরা ওই চার দিয়ে চলাচল করতে পারবে। এ স্থানে স্থায়ীভাবে চলাচল করার জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট একটি ব্রীজের জোর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।