পরেশ দেবনাথ, কেশবপুর, যশোর, দৈনিক সারা দুনিয়া।
যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়নের বসুন্তিয়া-পাঁচারই গ্রামের বুক চিরে বয়ে চলেছে বুড়ি ভদ্রা নদী। এই নদীর উপর কার্তিকের খেঁয়া নামক স্থানে বাঁশ নির্মিত একটি বাঁশের চার দেওয়া আছে যা ইতিমধ্যে একপাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। ওই চার দিয়ে সাত গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ও দু'টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। কিন্তু তিন/চার মাস আগে থেকে চারটির ভাঙ্গন শুরু হয়ে প্রায় এক মাস আগে এটির উত্তর পাড়ের কিছু অংশ একেবারে ভেঙে পড়েছে। এতে ওই চার দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে আসছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা-সহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এখন শিক্ষার্থীদের দুই/আড়াই কিলোমিটার ঘুরে বড়েঙ্গা ব্রীজ পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে জরুরী ভিত্তিতে চারটি সংস্কারসহ একটি ব্রীজের দাবী জানিয়েছেন ভূক্তভোগী এলাকাবাসী। তাছাড়া পাঁচারই গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ফকির বাড়িতে বসে তিন দিনের লোকজ মেলা। মেলাটি ৫ বৈশাখ থেকে ৭/৮ দিন ধরে চলায় প্রচুর লোক এই চার দিয়ে পারাপার হয়।
একসময় নদীর এপার-ওপার যাত্রীদের পারাপার করতো কার্তিক সরকার (পাটনি) গংরা , সে থেকে এই খেয়ায়াঘাটের নামকরণ হয় কার্তিকের খেয়া। তখন নদী ছিল খরস্রোতা, পলি পড়ে এখন আর সেই জৌলুশ নেই। এলাকার সচেতন স্বেচ্ছাসেবী মহল নদীর উপর গড়ে তুলেছিলেন বাঁশের চরাট দ্বারা নির্মিত চার। জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় চারটি এখন সাত গ্রামের মানুষের দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, আপার বুড়ীভদ্রা নদীর ওপরে বাঁশের চরাট দ্বারা নির্মিত চারটির উত্তর পাশের কিছু অংশ ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে।
এলকাবাসী জানান, উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়নের পাঁচারই, বসুন্তিয়া, রামকৃষ্ণপুর, কেদারপুর, পাথরা, চুয়াডাঙ্গা, ঘাঘা গ্রামের মানুষ এই চার দিয়ে চলাচল করেন। ইউনিয়নের কেন্দ্রস্থলে মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, মঙ্গলকোট বাজারে এই সকল গ্রামের মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে চার পার হয়ে আসেন। তা ছাড়া পাঁচারই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫/১৬ জন এবং পাঁচারই টি,এস (তরুণ সংঘ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩৫/৪০ জন শিক্ষার্থী এই সেতু পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতো এখন তাদের দুই/আড়াই কিলোমিটার ঘুরে বড়েঙ্গা ব্রীজ পার হয়ে কষ্ঠ করে আসতে হয়।
কথা হয় পাঁচারই টি,এস (তরুণ সংঘ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আঃ ওহাব, শিক্ষিকা
বসুন্তিয়া গ্রামের হাসিনা খাতুন, ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র বসুন্তিয়া গ্রামের সোয়েব ও ছাত্রী সাদিয়া পারভীনের সাথে। তাদের সকলের দাবী চারটি সংস্কার ও স্থায়ী একটি ব্রীজের।
কথা হয় পাঁচারই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বাস শহিদুল ইসলাম ও রামকৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে আসা শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের সাথে। তারাও সকলে এই বিদ্যালয়ে বসুন্তিয়া গ্রাম থেকে আসা শিক্ষার্থী ও এই চার দিয়ে চলাচলকারীদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন-সহ উর্ধতন মহলের নিকট।
ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে দেখা গেছে পাথরা থেকে বসুন্তিয়া গ্রামে কাজ করতে আসা কয়েকজন শ্রমিককে। তারা চারটি জরুরীভাবে মেরামত করার দাবী জানান। বসুন্তিয়া গ্রামের একজন অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে সাজু ক্লাস টুতে পড়ে, এই অবস্থায় সাহস করে পাঠাতে পারছি না।
চার পার হয়ে বসুন্তিয়া গ্রামের সুজিত সরকারের ছেলে সুকদেব সরকারের সাথে দেখা হয়। সে পাঁচারই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। চার দিয়ে পড়ে যাওয়ার ভয়ে পাঁচদিন বিদ্যালয়ে যায়নি।
এলাকার ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দিন গোলদারের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
পাঁচারই ফকির বাড়ির পাগলের থানের বর্তমান খাদেম সহকারী অধ্যাপক ফকির জালাল উদ্দীন আহম্মেদের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে জানান, ওই চারটির যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। চারটি সংস্কারসহ একটি ব্রীজের দাবী রাখি।
এ বিষয়ে স্থানীয় মঙ্গলকোট ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাদের বিশ্বাস জানান, ওই দুইটি বিদ্যালয় আমাকে অবগত করেন নাই, এখন আমি জানতে পেরেছি এবং দ্রুত বাঁশের চারটি সংস্কারের আশ্বাস দেন।